HSC ICT chapter :1 ভার্চুয়াল রিয়েলিটি | ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার | ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রভাব

 

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কী? 

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হলো কম্পিউটার সিমুলেশনের সাহায্যে তৈরি ত্রিমাত্রিক পরিবেশ যা ব্যবহারকারীর কাছে সত্য ও বাস্তব বলে মনে হয়।  অন্যভাবে বলা যায়, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হলো হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সাহায্যে তৈরি এমন এক ধরণের কৃত্রিম পরিবেশ যা ব্যবহারকারীদের কাছে সত্য ও বাস্তব বলে মনে হয়।

একে সিমুলেটেড পরিবেশও বলা হয়। কম্পিউটার প্রযুক্তি ও অনুকরণবিদ্যার প্রয়োগে কৃত্রিম পরিবেশকে এমনভাবে তৈরি ও উপস্থাপন করা হয়,যা ব্যবহারকারীর কাছে সত্য ও বাস্তব বলে মনে হয়।



সাম্প্রতিক সময়ে অগমেন্টেড রিয়েলিটি (Augmented Reality) নামে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির একটি নতুন রূপ জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে, যেখানে বাস্তব জগতের সাথে ভার্চুয়াল জগতের এক ধরণের সংমিশ্রণ ঘটানো হয়।

 

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ইতিহাস

 

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কত সালে আবিষ্কার হয়?

১৯৬২ সালে  মর্টন এল হেলগি তাঁর তৈরি সেন্সোরামা স্টিমুলেটর নামক যন্ত্রের মাধ্যমে প্রথম ভার্চুয়াল রিয়েলিটির আত্নপ্রকাশ করেন।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বৈশিষ্ট্য সমূহ কী কী ?

  • এই কৃত্তিম পরিবেশে ত্রি-মাত্রিক ছবি তৈরি হয়।
  • কৃত্তিম পরিবেশ হলেও অনুভূতি বাস্তবের মত।
  • এই পরিবেশ তৈরির জন্য সংবেদনশীল গ্রাফিক্স ব্যবহার করতে হয়।
  • কম্পিউটার প্রযুক্তি ও অনুকরণবিদ্যার (Simulation) প্রয়োগ করা হয়।
  • ব্যবহৃত সফটওয়্যারগুলো – Vizard, VRToolKit, 3d Studio Max, Maya ইত্যাদি।
  • ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য, ইন্টারেক্টিভ, কম্পিউটার-নিয়ন্ত্রিত, অন্বেষণযোগ্য এবং নিমগ্নযোগ্য হতে হবে। 

 

ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে বাস্তব অনুভব করার জন্য তথ্য আদান-প্রদানকারী বিভিন্ন ধরণের ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। যেমন- 

  • মাথায় হেড মাউন্টেড ডিসপ্লে (HMD: Head Mounted Display)
  • হাতে একটি ডেটা গ্লোভ (Data Glove) বা হ্যান্ড গ্লাভস
  • শরীরে একটি পূর্ণাঙ্গ বডি স্যুট (Body Suit), বুট ইত্যাদি পরিধান করতে হয়।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সিস্টেম তৈরির উপাদান গুলো কী কী ? 

ইফেক্টর (Effector): ইফেক্টর হলো বিশেষ ধরণের ইন্টারফেস ডিভাইস যা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি পরিবেশের সাথে সংযোগ সাধন করে। যেমন- হেড মাউন্টেড ডিসপ্লে, ডেটা গ্লোভ, পূর্ণাঙ্গ বডি স্যুট ইত্যাদি।

রিয়েলিটি সিমুলেটর (Reality Simulator): এটি এক ধরণের হার্ডওয়্যার যা ইফেক্টরকে সংবেদনশীল তথ্য সরবরাহ করে। যেমন- বিভিন্ন ধরণের সেন্সর।

অ্যাপ্লিকেশন (Application): বিভিন্ন সিমুলেশন সফটওয়্যার সমূহ। যেমন- অটোডেস্কের “Division”।

জিওমেট্টি (Geometry): জিওমেট্রি হলো ভার্চুয়াল পরিবেশের বিভিন্ন বস্তুর বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত তথ্যাবলী।

 

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রকারভেদ: 

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি দুই ধরণের।

  1. টেলিপ্রেজেন্স (Telepresence)
  2. সাইবার স্পেস (Cyberspace)

টেলিপ্রেজেন্স (Telepresence):

এই ধরণের ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে ব্যবহারকারীর সামনে দূরবর্তী কোন বাস্তব পরিবেশকে কৃত্রিমভাবে উপস্থাপন করা হয় এবং দূরবর্তী ঐ বাস্তব পরিবেশে একটি রোবট উপস্থিত থাকে। ভার্চুয়াল পরিবেশে ব্যবহারকারী যা করবে, দূরবর্তী স্থানের বাস্তব পরিবেশে অবস্থিত রোবট তার অনুকরণ করে কাজ করবে। এক্ষেত্রে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটারের গ্রাফিক্স ব্যবহারের মাধ্যমে দূর থেকে পরিচালনা করার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়, যাকে টেলিপ্রেজেন্স বলা হয়।


সাইবার স্পেস (Cyberspace):

এই ধরণের ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে ব্যবহারকারী বাস্তব অথবা কাল্পনিক পরিবেশে অবস্থানের অনুভুতি পায়। সিমুলেশনের ধরণ অনুযায়ী এটি বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে-

নন-ইমার্সিভ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি:

এই ধরণের ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে একটি শক্তিশালী কম্পিউটারের মাধ্যমে ডিসপ্লেতে একটি সিমুলেটেড পরিবেশ তৈরি করে দেখানো হয়। ব্যবহারকারীরা এই পরিবেশকে বিভিন্ন ইনপুট ডিভাইসের মাধ্যমে কন্ট্রোল করতে পারে। যেমন- বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারে মহাকাশ অবলোকন, 3D গেমস ইত্যাদি।

সেমি-ইমার্সিভ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি:

এই ধরণের ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে 3D গ্রাফিক্সের মাধ্যমে আংশিক ভার্চুয়াল পরিবেশ তৈরি করা হয়। এই পরিবেশ তৈরির জন্য হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে বাস্তব পরিবেশের মতো অবকাঠামো তৈরি করা হয়। উচ্চ রেজুলেশনের ডিসপ্লে ও কম্পিউটার সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অনুভুতি প্রদান করা হয়। যেমন- বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারে রোলার কোস্টারে পরিভ্রমন, ফ্লাইট সিমুলেশন ইত্যাদি।

ফুল-ইমার্সিভ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি:

এই ধরণের ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে সিমুলেশনের মাধ্যমে দৃষ্টি, শ্রবণশক্তি, স্পর্শ, গন্ধ ইত্যাদি অনুভুতির বাস্তব রুপ দেয়া যায়। ফলে ব্যবহারকারী মানসিক ও শারিরীকভাবে সম্পূর্ণরূপে ভার্চুয়াল পরিবেশে নিমজ্জিত হয় এবং পরিবেশের সাথে ইন্টারেক্ট করে থাকে। এই ধরণের পরিবেশে পাখির মতো উড়ার অনুভুতি দেয়।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার

খেলাধুলা ও বিনোদন ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি

বর্তমানে প্রায় প্রতিটি চলচ্চিত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার দেখা যায়। ত্রিমাত্রিক পদ্ধতিতে নির্মিত ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নির্ভর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, পৌরাণিক কাহিনী, কার্টুন, ঐতিহাসিক চলচ্চিত্র ইত্যাদি সবার কাছে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

মিউজিয়াম বা ঐতিহাসিক যেসব স্থানে ভ্রমন করা সবার পক্ষে সম্ভব না, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে সেইসব স্থানে ভ্রমণ করার অনুভুতি পাওয়া সম্ভব হচ্ছে।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কল্যাণে কম্পিউটার সিস্টেমে খেলাধুলার অনুশীলন সহজ হচ্ছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে তৈরি নানা ধরণের কম্পিউটার গেম সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

ব্যবসা ও বাণিজ্যে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি

কোন পণ্য উৎপাদনের পূর্বে পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষা, গঠন যাচাই, বিপণন ও সম্ভাব্যতা যাচাই, বিপণন কর্মী প্রশিক্ষণ ইত্যাদি কার্যক্রমে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সিমুলেশন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে ভোক্তা বা ক্রেতার কাছে পণ্যের ব্যবহার পদ্ধতি ও অন্যান্য সুবিধাসমূহ সহজে উপস্থাপন করা যায়।

কোন বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর দ্রব্য বাজারজাত করার পূর্বে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে সেগুলো পরীক্ষা করে কর্মচারীদের জীবন ঝুঁকিমুক্ত রাখা সম্ভব হয়।

প্রকৌশল ও বিজ্ঞানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি

 বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রসেসের সিমুলেশনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যাপক প্রয়োগ রয়েছে।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি 

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহারের অন্যতম বৃহৎ ক্ষেত্র হচ্ছে চিকিৎসাবিজ্ঞান। এই প্রযুক্তিতে সিমুলেশনের মাধ্যমে জটিল সার্জারি, কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন, ডিএনএ পর্যালোচনা ইত্যাদি অত্যন্ত সূক্ষভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। নবীন চিকিৎসকদের নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দেয়া বা শল্য চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ও রোগ নির্ণয়ে ব্যাপকভাবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহৃত হচ্ছে।

যানবাহন চালানো প্রশিক্ষণে বা ড্রাইভিং প্রশিক্ষণে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সবচেয়ে বাস্তবমুখী ব্যবহার হয়ে থাকে ফ্লাইট সিমুলেশনে, যেখানে বৈমানিকরা বাস্তবে বিমান উড্ডয়নের পূর্বেই বিমান পরিচালনার বাস্তব জ্ঞান লাভ করে। এছাড়া ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে সিমুলেটর ও মডেলিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে মোটরগাড়ি, জাহাজ ইত্যাদি চালনার বিভিন্ন বিষয়ে বাস্তব ধারণা লাভ করা যায়। ফলে প্রশিক্ষণার্থী দ্রুত গাড়ি চালনা শিখতে পারছে। এক্ষেত্রে ঝুঁকির পরিমাণও কমে যাচ্ছে।

সামরিক প্রশিক্ষণে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রয়োগ করে সত্যিকার যুদ্ধক্ষেত্রের আবহ তৈরি করে সৈনিকদেরকে উন্নত ও নিখুঁত প্রশিক্ষণ প্রদান করা যায়। সেনাবাহিনীতে অস্ত্র চালনা এবং আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবহারে কম সময়ে নিখুঁতভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করা যায়।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রয়োগ করে বিমানবাহিনীতে বিমান চালনা প্রশিক্ষণ এবং প্যারাস্যুট ব্যবহারে প্রশিক্ষণ প্রদান করা যায়।

নৌবাহিনীতে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ এবং ডুবোজাহাজ চালনা প্রশিক্ষণে ব্যপকভাবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়।

মহাকাশ অভিযানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রয়োগ করে ত্রিমাত্রিক সিমুলেশনের মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ছাত্র-শিক্ষকরা সৌরজগৎ এর গ্রহ বা গ্রহাণুপুঞ্জের অবস্থান, গঠনপ্রকৃতি ও গতিবিধি, গ্রহের মধ্যস্থিত বিভিন্ন বস্তু বা প্রাণের উপস্থিতি ইত্যাদি সম্পর্কে সহজেই ধারণা অর্জন করতে পারে।

ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সাহায্যে যাদুঘরে ত্রিমাত্রিক চিত্রের মাধ্যমে ইতিহাস-ঐতিহ্য উপস্থাপন করা যায়। ফলে আগত দর্শণার্থীরা তা দেখে মুগ্ধ হয় ও বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বাস্তব ধারণা লাভ করে থাকে।

প্রাত্যহিক জীবনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রভাব

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ইতিবাচক প্রভাব

১। শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেতে জটিল বিষয়গুলো ত্রিমাত্রিক চিত্রের মাধ্যমে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা যায়।

২। ঝুঁকিপূর্ণ উৎপাদন ব্যবস্থায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রয়োগ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে উৎপাদন ব্যবস্থা সহজ ও সরল করা সম্ভব।

৩। বাস্তবায়নের পূর্বে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে সিমুলেশনের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উৎপাদন ব্যবস্থার জটিল প্রসেসকে সরল করা যায়, প্রোডাক্ট ডিজাইনের ত্রুটি-বিচ্যুতি নির্ণয় করে কম খরচে উৎপাদন করা যায়।

৪। ঝুঁকিপূর্ণ প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।

 

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির নেতিবাচক প্রভাব

১। বাস্তবের স্বাদ পাওয়ায় কল্পনার রাজ্যে বিচরন করতে পারে। ফলে এর প্রতি অনেকের মধ্যে আসক্তি তৈরি হয়।

২। যেহেতু ভার্চুয়াল রিয়েলিটি একটি কম্পিউটার সিস্টেম তাই এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

৩। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যয়বহুল হওয়ায় সবাই এই প্রযুক্তি ব্যবহারে সুবিধা পায় না। ফলে ডিজিটাল বৈষম্য তৈরি হয়।


NAME: ICT HEAD

MOBILE: 01818799572

Follow us on Facebook : Click here to see more

ADDRESS: Dhaka, Bangladesh



Previous Post Next Post

Making Ict Easier For Everyone

HSC ICT

Contact Form